জকিগঞ্জে ঝুলিয়ে নির্যাতন: ফকির মাস্তান আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে ডেস্ক:: সিলেটের জকিগঞ্জে বিচারের নামে এক যুবককে বেঁধে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে কাজলসার ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালামের ওরফে ফকির মাস্তানের বিরুদ্ধে।

নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিও ভাইরালের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে চরম ক্ষোভ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি।

ভিডিওতে এতে দেখা গেছে, জকিগঞ্জ উপজেলার ৩নং কাজলশার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম ওরফে ফকির মাস্তান একই ইউনিয়নের বড়বন্দ গ্রামের মৃত সফর আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন (৩৫)কে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পায়ের নিচে বেধড়ক মারপিট করে নির্যাতন করছেন। নির্যাতনের শিকার যুবক চিৎকার, চেচামেচি ও বাঁচার আকুতি করতেও দেখা যায়। এরপরও আব্দুস সালামের নির্যাতন থেমে থাকেনি। ভিডিওটি পুলিশের হাতেও পৌঁছেছে। পুলিশ ভিডিও চিত্র দেখে আব্দুস সালামকে আটকে বুধবার রাত থেকে অভিযান শুরু করে। অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কানাইঘাটের কাড়াবাল্লাহ থেকে আটক করেছে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ ছাড়া গত ১২ নভেম্বর ফকির মস্তানের বিরুদ্ধে সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে একটি অভিযোগ করেন আটগ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আব্দুস সালামের নির্যাতনে নিহত আব্দুল মান্নান বুতুলের চাচাতো ভাই শাকিল আহমদ।

অভিযোগে তিনি বলেন, ১০ অক্টোবর দুপুরে নিহতের স্ত্রী লায়লী বেগম ও চারিগ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম মেম্বার ওরফে ফকির মাস্তান কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আব্দুল মান্নানকে নির্মমভাবে প্রহার করেন। তাদের প্রহারে ঔই দিন রাতে মান্নান মারা গেলে তার মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন। পরের দিন এশার নামাজচলাকালীন সময়ে কোনো মাইকিং না করে চুপিসারে ৪/৫জন লোক নিয়ে নিহতের দাফন করে দেন আব্দুস সালাম উরফে ফকির মাস্তান।

লিখিত অভিযোগে সালাম মেম্বারের নানা অপকর্মের বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, সালাম মেম্বার আশ্রয়ন প্রকল্পটি তার কব্জায় রেখে নারী ও মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন।
ইতিপূর্বে অভিযোগকারীকে মারধোর করে বসত ঘরে আগুন দিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে। তার নিহত ভাই আব্দুল মান্নানের স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল সালাম মেম্বারের। অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান জানিয়েছে, আব্দুল সালাম বিএনপির কেউ নয়। কোন কমিটিতে তার পদপদবী নেই। সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আতাত করে সবসময় অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকে। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার জনগন দেখতে চায়।

জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের বলেন, প্রায় তিন মাস আগে আব্দুস সালাম এ ঘটনাটি করে। নির্যাতিত ব্যক্তি গিয়াস উদ্দিনকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। আমরা আব্দুস সালামকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে আব্দুস সালামকে ভারতে পালানোর পথে কানাইঘাটের কাড়াবাল্লা এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।

আশ্রয়ন প্রকল্পের আব্দুল মান্নান বুতুলকে হত্যার প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের কাছে খবর ছিলো নিহত মান্নান বিষপান করেছে। অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে তাকে জকিগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেটে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মুত্যুর পর আমাদেরকে জানানো হয় সে মৃত্যু বরন করেছে। আমি তাদেরকে বলেছি ময়নাতদন্ত করে লাশ দাফন করতে হবে।

পরে সিলেট কোতোয়ালী থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ থানায় ঘটনার তিনদিন পর একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর